হাইড্রলিক হর্নে শিশুর কান্না

আজ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা দিয়ে গণপরিবহনে (লোকাল বাস) চড়ে গুলিস্তানের দিকে আসছিলাম। সাইনবোর্ডে সবসময়ই সিগন্যাল পড়ে এবং সেখানে প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট অলস সময় পার করতে হয়, আজও ব্যতিক্রম ছিল না।

বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে গাড়িগুলো জ্যামে আটকে থেকে অগ্রসর হোক আর না হোক, চালকেরা ক্রমাগত হর্ন বাজাতে থাকে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই হলো হাইড্রলিক হর্ন, যা কানে প্রচণ্ড রকম আঘাত করে। সরকার আইন করে হাইড্রলিক হর্ন নিষিদ্ধ করেছিল, তারপরও এগুলো ব্যবহৃত হয় কীভাবে? একটা ব্যাপার কোনো চালক বুঝতে চায় না যে, সামনের গাড়িওয়ালা তো সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে এখানে আসে নি, সে সুযোগ পাওয়া মাত্রই নিশ্চয়ই সামনে অগ্রসর হবে। তাহলে শুধুশুধু হর্ন বাজানো কেন?

কেন জনগণের কানে তালা লাগানোর ব্যবস্থা করা? আমরা বড় মানুষেরা বা প্রাপ্তবয়স্করা হয়তো এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, কিন্তু কোমলমতি শিশুরা তো হয় নি। আজকে বাসে আমার সামনের সিটে এক ইয়াং দম্পতি বসেছিল, তাদের কোলে ছিল ৪-৫ মাস বয়সের একটি শিশু। শিশুটি খুব সম্ভবত ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ পাশের একটি বড়সড় বাসের প্রচণ্ড হর্নের শব্দ তার ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং শিশুটি চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলো। বাসের এই উচ্চশব্দের অপ্রত্যাশিত হর্ন ছিল শিশুটির কাছে একটি ‘অফেন্স’ এর মতো। কী কারণে তাকে অফেন্ড করা হলো সেটা সে বুঝতে পারে নি। তাই বেশকিছু সময় ধরে শিশুটি ক্রমাগত কাঁদতেই থাকলো। তার বাবা-মা অনেকক্ষণ ধরে শিশুটিকে আদর করে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তার কান্না থামালো। হয়তো শিশুটি এতে প্রবোধ পেল যে, এমনটি আর হবে না। এভাবে শব্দদূষণের কারণে কত শিশুর, কত বৃদ্ধ-বৃদ্ধার, কত অসুস্থ রোগীর সমস্যা হচ্ছে সেটা কি কেউ ভেবে দেখেছে? যে করেই হোক. এসব থামাতে হবে।

আরেকটা বিষয় হলো, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও অন্যান্য নগরীর যেসব পয়েন্টে ট্র্যাফিক জ্যাম বেশি হয় এবং সিগনালের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে গাড়িগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সেসব পয়েন্টে সরকার ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে যাচ্ছে কিনা। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় এরকম একটি ফ্লাইওভার দরকার। পুনরায় এটাও বলতে চাই, কোনো স্থানে ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেল বা অন্য কোনো বড় স্থাপনা নির্মাণ হতে থাকলে সেখানে এতো হূলস্থূল হয় কেন, পুরো একটা জঞ্জালের মতো অবস্থা তৈরি হয় কেন আমাদের দেশে? আমি ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা দিয়ে বাসে চলাচল করি, তাই এ কথাটা বলছি। সেখানে শুধু ট্র্যাফিক জ্যাম নয়, বরং মাতুয়াইল থেকে শুরু করে স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত পুরো জায়গাটা যেন কনক্রীট ও মাটি-বালুর এক জঙ্গল। এমনটাই কি হওয়ার কথা ছিল, শুধু মেট্রোরেলের কাজ চলছে বলে?

এর কি কোনো বিকল্প নেই? আমি মেট্রোরেলের বিকল্পের কথা বলছি না, বলছি এই ‘জঙ্গল মার্কা টাইপ’ কাজের স্টাইলের কথা। অন্যান্য দেশেও কি বড় বড় প্রকল্পের কাজের সময় এরকম হূলস্থূল কাণ্ড ঘটে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.