মহামারি করোনাসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধির ক্ষতি থেকে বাঁচতে ইসলামে রয়েছে হাদিসের নির্দেশনা ও উপায়। মহামারি করোনার এ পরিস্থিতিতে তা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘরে অবস্থান করা।
এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় কোটির কাছাকাছি। প্রায় পাঁচ লাখের মতো মানুষ এ ভাইরাসে প্রাণ দিয়েছে। সুতরাং মহামারি রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে অবশ্যই রোগে আক্রান্ত এলাকা থেকে দূরে থাকতে হবে।
মানুষের জীবন অনেক দামি। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার তাগিদ দিয়েছেন। দিয়েছেন সুস্থ থাকার তাগিদ। অথচ মানুষ জীবন বাঁচাতে যেখানে সতর্কতা অবলম্বন করবে সেখানে মানুষ সতর্ক না হয়ে বরং উল্টো করোনাকে থোরাই কেয়ার করছে।
বেপরোয়া জীবন যাপন করছে। অথচ মহামারি আক্রান্ত অঞ্চল এড়িয়ে চলা সবার জন্য জরুরি। হাদিসের এ বর্ণনাটিও সবার জন্য আবশ্যক। যদিও তা ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি ফেতনা সম্পর্কে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফেতনার সময় মানুষের নিরাপত্তার উপায় হচ্ছে, তার নিজ ঘরে অবস্থান করা।’ (জামে)
রাসুলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুর্বল, অসুস্থ উটকে সুস্থ-সবল উট থেকে আলাদা স্থানে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যেন সুস্থ-সবল উটটি অসুস্থ হয়ে না যায়। এ নির্দেশ থেকেও প্রমাণিত যে, সুস্থ মানুষ মহামারি আক্রান্ত অঞ্চল কিংবা মহামারির লক্ষণ দেখা যাওয়া উপসর্গ বা রোগ-ব্যাধি গ্রস্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করা জরুরি।
সুতরাং যে অঞ্চল বা এলাকায় মহামারি করোনা দেখা যায়, কিংবা যে ব্যক্তি মহামারি করোনায় আক্রান্ত কিংবা করোনার উপসর্গের উপস্থিতি আছে, তার থেকে নির্ধারিত দূরত্বে অবস্থান করার মাধ্যমে হাদিসের উপর যথাযথ আমল করা। যেভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘অসুস্থকে সুস্থের মধ্যে নেয়া হবে না (রুগ্ন উট সুস্থ উটের কাছে নেবে না)।’ (বুখারি, মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-
وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
‘তোমরা নিজেদেরকে নিজেরা ধ্বংসের মধ্য নিক্ষেপ করোনা।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ১৯৫)
মহামারি করোনা থেকে সুস্থ থাকার উপায় হলো-
প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মুমিন মুসলমানের সেই বিখ্যাত হাদিসের উপর আমল করা জরুরি। যে হাদিসের উপর আমল করলে সবাই মহামারির বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। হাদিসে এসেছে-
হজরত উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা কোনো ভূখণ্ডে প্লেগ মহামারির প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তে শোন, তবে সেখানে প্রবেশ করো না। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে এমন ভূখণ্ডে যদি তোমরা থাক, তবে সেখান থেকেও বের হয়ো না।’ (বুখারি)
(মজার ব্যাপার হলো, কানাডার মোট জনগোষ্ঠীর কেবল ৪% মুসলিম হলেও সেখানে রাজপথের পাশে বিরাট আকারের বিলবোর্ডে এই হাদিসটি লেখা আছে, জনগণকে অবহিত করানোর উদ্দেশ্যে।)
মুমিন মুসলমানের উচিত, যদি কেউ মহামারি করোনা উপসর্গে আক্রান্ত হয়, কিংবা অসুস্থতায় ভোগে তবে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করবে, হাদিসের উপর আমল করবে। আর তাতে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে মহামারি করোনা থেকে মুক্তি দান করবেন।
মহামারি করোনাসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচতে হাদিসে নির্দেশিত দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা জরুরি। আর তাহলো-
>> اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।
>> اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহামারি করোনায় স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি চিকিৎসা গ্রহণ ও হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। মহামারি করোনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।
সূ্ত্রঃ জাগোনিউজ২৪