বাংলাদেশে ল্যাবরেটরি এবং টেস্টিং কিটের ঘাটতি দেখা দেয়ায় করোনাভাইরাস পরীক্ষা সংকটের মুখে পড়েছে বলে জানা গেছে।
নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার সাথে জড়িতদের অনেকে জানিয়েছেন, এখন নমুনা সংগ্রহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে এবং একেবারে প্রয়োজন ছাড়া পরীক্ষা করা হচ্ছে না।
দেশটিতে সংক্রমণের উচ্চহারের মুখে ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার টার্গেটের কথা বলা হলেও এখন ১৬ বা ১৭ হাজারের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, কিট নয়, ল্যবরেটরির অভাবে পরীক্ষার ক্ষেত্রে জট লেগে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করা হয়েছিল ঢাকায় আইইডিসিআর এর ল্যাবরেটরি থেকে।
সংক্রমণ শুরুর তিন মাস পর একটি ল্যাব থেকে ল্যাবের সংখ্যা ৬২তে নেয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি ল্যাবরেটরিই ঢাকায় এবং বাকিগুলো বিভিন্ন বড় শহরে।
এগুলোর মাঝেও ল্যাব সংক্রমিত হয় এবং সেজন্য সব ল্যাব একসাথে চালু রাখা যায় না। ফলে প্রতিটি ল্যাবেই নমুনার জট লেগেই আছে বলে বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর সাথে এখন পরীক্ষার কিটের অভাব দেখা দেয়ায় পরীক্ষায় সংকট আরও বেড়েছে।
সরকারের সাথে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৫৪টি বুথ বসিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছে।
এই বুথ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্র্যাকের কর্মকর্তা মোর্শেদা চৌধুরী বলেছেন, ল্যাবের পাশাপাশি কিটের সংকটের কারণে এখন নমুনা সংগ্রহ কমানো হয়েছে।
“আমাদের প্রতিটি বুথ থেকে প্রতিদিন ৩০টি করে নমুনা সংগ্রহ করা হতো।এটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেই বেঁধে দেয়া একটা সংখ্যা। কারণ হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক নমুনা আমাদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার ক্ষমতা আছে। এখন যেটা হয়েছে, এই সপ্তাহে আমাদের বলা হয়েছে, আমরা যেন নমুনা সংগ্রহ একটু কম করি। কারণ কিটের একটু স্বল্পতা আছে।”
তিনি আরও বলেছেন, “সেজন্য এই সপ্তাহে আমরা অর্ধেক করে নমুনা সংগ্রহ করছি অর্থাৎ ৩০টার জায়গায় আমরা ১৫টা করে নমুনা সংগ্রহ করছি।”
“এছাড়া এধরণের ল্যাবে ঝুঁকি থাকে। ল্যাবও সংক্রমিত হয়ে যায়। তখন সেই ল্যাব কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। সেজন্য অন্য ল্যাবের ওপর একটা চাপ তৈরি হয়। এবং একটা ব্যাকলগ হয়,” বলছেন ব্র্যাকের কর্মকর্তা মোর্শেদা চৌধুরী।
ল্যাবরেটরি সব জেলায় নেই। ফলে যেখানে ল্যাব আছে, আশেপাশের জেলা বা অঞ্চলের পরীক্ষা নির্ভর করতে হয় সেই ল্যাবগুলোর ওপর ।
এমন কয়েকটি ল্যাবে কিটের অভাবে পরীক্ষা কমিয়ে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নোয়াখালী জেলা শহরের দু’টি ল্যাবে পাশের ফেনী এবং লক্ষ্মীপুর জেলার নমুনাও পরীক্ষা করা হয়।
নোয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বলেছেন, কয়েকদিন ধরে কিটের সংকটের কারণে তাদের একটি ল্যাবে পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হয়েছে।
“পরীক্ষা বন্ধ হয়েছে আমাদের আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ ল্যাবে। সেখানে কিটের সংকটের কারণে এটা করতে হয়েছে। আর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা চালু রাখা গেছে। যেহেতু দুই জায়গার টেস্ট এক জায়গায় হচ্ছে, সেজন্য আমরা খুব সিলেকটিভ বা শুধু প্রয়োজন এমন টেস্টগুলো করছি।”
করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আগে দেশে মজুদ থাকা কিটের তথ্য তুলে ধরা হতো। অনেক দিন ধরেই কিট সম্পর্কে তথ্য দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
এখন কিটের মজুদ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেউ মুখ খুলতে রাজি নন।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিভিন্ন দেশ থেকে কিট আনা হচ্ছে এবং তা আসতে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ টেস্টিং কিটের চেয়ে ল্যাবরেটরির অভাবকে বড় সংকট হিসাবে দেখছেন।
“আমার কিটের চেয়ে বড় সমস্যা ল্যাবরেটরি। যে কয়টা ল্যাবরেটরি আছে, তারা সময়মতো টেস্ট করে কুলায় উঠতে পারছে না। এখন ৬২টা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হচ্ছে। এই ৬২টা ল্যাবরেটরি ১৬ হাজার বা ১৭হাজারের বেশি টেস্ট করতে পারছে না। ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে এই টেস্টের রিপোর্ট পেতে ৭দিনও চলে যাচ্ছে। তো একজনের লক্ষণ আছে, তিনি ৭দিন অপেক্ষা করবেন, কোন চিকিৎসা নেবেন না, এটাতো হবে না।”
অধ্যাপক আজাদ আরও বলেছেন, ” পরীক্ষা কিটের অভাবে বন্ধ হয় নাই। এখানে কিটের সমস্যাটা বড় জিনিস না। মূল সমস্যা হচ্ছে, এই মুহূর্তে এত টেস্ট করার সক্ষমতা ল্যাবরেটরির নাই। আমরা ল্যাবরেটরি বাড়াচ্ছি। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এটা বাড়াতে পারবো না, অর্থাৎ এই মেশিনটাতো কিনতে হয়। তারপর এটা বসাতে হয়। এটা বসাতে বসাতে তো বেশ কিছুদিন চলে যাবে।”
তবে সব জেলা শহরে আরটিপিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট কোন সময় তিনি বলেননি।
এছাড়া অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার যে কথা তারা বলছেন, সেটাও শুরু করার প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট কোন সময় জানা যায়নি।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা