দেশে ইদানিং অনেক মেয়েই তালাক না দিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করছে

দেশে ইদানিং অনেক মেয়েই তালাক না দিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করছে। এতে আইনের অবমাননা হলেও ঐ মেয়েগুলোর কিছুই হচ্ছে না। ছেলেরাও লোকলজ্জার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয় না। এ ধরনের বিবাহের ফলে অনেক ক্ষেত্রে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড এ ধরনের একটি ঘটনা থেকেই উদ্ভূত হয়েছে। যদি রিফাত, নয়ন ও মিন্নির ‘ত্রিভুজ বিবাহ’-এর কাহিনী না জেনে থাকেন, তাহলে নিচের লিংকে ক্লিক করে সেটা জেনে নিন।

মিন্নি, রিফাত ও নয়নের ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

আমার বউয়ের দুই ফুফাতো ভাই হলো ইমাম ও বাবু। তাদের দুজনার বউই স্বামী ছেড়ে চলে গিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করেছে। তারা প্রত্যেকে একটি করে বাচ্চা রেখে গিয়েছে এবং যাওয়ার সময় কোনো প্রকার ডিভোর্স বা তালাকের ধার ধারে নি। ঘটনাক্রমে তারা দুজনেই খুলনার মেয়ে। আসলে তারা আপন বোন। আমার ঐ শ্যালকদ্বয় যখন তাদের পিতার চাকুরির সুবাদে খুলনার রেলওয়ে কলোনীতে বাস করতো, তখন সেখানে তাদের সাথে ঐ মেয়েদুটির পরিচয়।

যখন ছেলেদুটি তাদের বাপের টাকা উড়াতো, সেটাই চোখে লেগেছে ঐ মেয়েদুটির। কিন্তু তাদের বাপ যখন আরেকটি বিবাহ করলো, তখন তারা পিতাকে ‘ত্যাজ্য’ করে চলে আসে। এ ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই ইমামের বউ তাকে ছেড়ে চলে যায়। অভিযোগ ছিল, ইমামের মাথায় সমস্যা। তার মাথায় আসলেই সমস্যা।

সে আগে খুলনার রেলওয়ে কলোনীতে বিশাল টেরর ছিল, বহুত মাস্তানি করেছে সে সেখানে। কিন্তু একদিন প্রতিপক্ষের লোকেরা তার মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে। তখন থেকেই তার মাথা আউলাঝাউলা। মজার ব্যাপার হলো, ইমামের যখন বিয়ে হয়, তার আগেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ ব্যাপারটা এমন না যে, বিয়ের পর ইমামের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ এই অভিযোগটা করেই তার বউ বিদায় নিয়েছে।

আসলে ইমামের চেয়ে বড় মালদার পার্টি পেয়েছে মেয়েটি, তাই চলে গেছে। ইমামের বউ চলে যাবার দু’-তিন বছর পর তার ছোট ভাই বাবুর বউও চলে যায়, যে কিনা ইমামের শ্যালিকা ছিল। আমার এস্টিমেশন মতে, এবারও একই কেস। আরো বেশি মালদার পার্টি পেয়েছে, তাই চলে গেছে। বাবুর বউয়ের অভিযোগ, বাবু নাকি ভাদাইম্যা। কথা সত্য, তবে সে বিয়ের আগে থেকেই ভাদাইম্যা। এসব দেখেশুনেই মেয়েটি তাকে বিবাহ করেছিল। মেয়েরা যে এভাবে বেশি মালদার পার্টি পাওয়া মাত্র চলে যায়, বিষয়টি আমার কাছে খুবই মর্মান্তিক লেগেছে। তারা দুজনেই খুলনার মেয়ে এবং দুজনেই চলে যাবার সময় তাদের প্রাক্তন স্বামীকে তালাক দেয় নি।

আমার ডাক্তার শ্যালক খুলনার মেয়ে বিবাহ করতে চাচ্ছে

আমার ডাক্তার শ্যালক সম্প্রতি বিসিএসে চান্স পেয়েছে এবং নিজ জেলা ঝালকাঠিতে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন হিসেবে জয়েন করেছে। সে খুলনা মেডিকেল থেকে পড়াশুনা করেছিল। সে একই মেডিকেল থেকে পাস করা একটি মেয়েকে পছন্দ করে, তাকে বিয়ে করতে চায়। মেয়েটি তার চেয়ে এক ব্যাচ ছোট, বিসিএসে কোয়ালিফাই না করলেও বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল) তে এফসিপিএস করছে।

সমস্যা হলো, এই মেয়েটিও খুলনার বাসিন্দা। তাই আশংকায় আছি, সে পরবর্তীতে মামুনের মনে কষ্ট দেয় কিনা। এবার বলবো, আরেক বোকাচন্দের কথা। সে ইমামের আপন খালাতো ভাই, জাকির – আমার একজন শ্যালক (আমার বউয়ের আপন ফুফাতো ভাই)। এই বোকাচন্দও খুলনার মেয়ে বিয়ে করেছে। যদিও ওরা খুলনার পরিচয় দেয়, তবে ওরা অরিজিনালি যশোরের মানুষ। ঐ খুলনা আর যশোর একই কথা আর কি! বিয়ের পরপরই মেয়ের সে কী বাহানা! এটা দিতে হবে, সেটা দিতে হবে – গাড়ি কিনে দিতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ নিজেরা নিতান্ত ফকিন্নি টাইপের, কেবল ভাব নেয় আর চলাফেরা করে জমিদারদের মতো – অর্থাৎ অন্তঃসারশূন্য।

এভাবে লাইন ধরে ‘উপনিবেশ’ মার্কা বিবাহ করা কি ঠিক?

এটা আমার প্রশ্ন যারা এভাবে লাইন ধরে একটি নির্দিষ্ট জেলা বা এলাকার মেয়ে বিবাহ করেন, তাদের প্রতি। তারা কি ব্যাপারটার মধ্যে একটু ‘উপনিবেশ’-এর গন্ধ পান না? বরিশালের ছেলেরা কেন লাইন ধরে খুলনার মেয়েদেরকে বিয়ে করবে? (ওমর সানী বরিশালের আর মৌসুমী খুলনার)। চাঁদপুর আর কুমিল্লার ছেলেরা কেন লাইন ধরে মুন্সিগঞ্জের মেয়ে বিয়ে করবে? চাঁদপুর, লক্ষীপুর আর নোয়াখালীর (অর্থাৎ মেঘনা নদীর পূর্ব পাশের) অনেক পাগল লাইন ধরে বরিশাল বিভাগের মেয়েদের বিবাহ করে। আমিও একই ভুল করেছি।

আমি না হয় জীবনে পড়াশুনা করেছি বেশি, লোকজনের মনমানসিকতা ও সমাজের অসঙ্গতিসমূহ নিয়ে খুব একটা ভাবি নি বিয়ের আগে। এছাড়া আমি বিয়ে করেছি মাত্র ২৫ বছর বয়সে। কিন্তু আমার শ্যালক মামুনের বয়স ৩০, আর অপর শ্যালক জাকিরের বয়স ছিল ৩১, যখন সে বিবাহ করে। তারা কেন এ বিষয়গুলো বিবেচনা করছে না?

মুন্সিগঞ্জের কয়টা ছেলে চাঁদপুর আর কুমিল্লার মেয়েকে বিবাহ করে? খুলনার কয়টা ছেলে বরিশালের মেয়েদেরকে বিবাহ করে? নরসিংদীর কয়টা ছেলে বি.বাড়িয়ার মেয়েদেরকে বিয়ে করে? বরিশালের কয়টা ছেলে কুমিল্লা আর নোয়াখালীর মেয়েদেরকে বিয়ে করে?

এগুলো আপাতদৃষ্টিতে পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে। কিন্তু বিষয়গুলো সুক্ষ্ম, এগুলো হিসাবে নিতে হবে। যতই মেধাবী হোক না কেন, চাকুরিতে যেমন একই জেলা থেকে বেশি লোক নেয়া হয় না। ঠিক তেমনি বিয়ের সময় এ হিসাবনিকাশগুলো করতে হবে। যেমনঃ চাঁদপুরের ছেলেরা যে লাইন ধরে মুন্সিগঞ্জের মেয়েদেরকে বিয়ে করে, সেটা আমি বিয়ের আগেই টের পেয়েছিলাম।

তাই আমার এক বিক্রমপুরী স্কুলফ্রেন্ডকে হতাশ করেছিলাম আমি; তার অনেক আশা ছিল, আমার কাছে তার বোনের বিয়ে দিবে। তার বোন আমার বউয়ের চেয়ে ঢের ভালো ছিল – ফিগার, চেহারা, বুদ্ধিশুদ্ধি, শিক্ষাদীক্ষায় (তবে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও যৌন চরিত্রের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল)। তা সত্ত্বেও কোটা মিলাতে গিয়ে তাদেরকে হতাশ করেছি আমি। তবে বরিশালের ব্যাপারে ভুল করে ফেললাম। বরিশালের লোকজনও যে লাইন ধরে কুমিল্লা, চাঁদপুর আর নোয়াখালীর ছেলেদের কাছে নিজের বোন আর মেয়েদের বিয়ে দিতে চায়, সেটা আগে বুঝতে পারি নি। আর নিজেরা লাইন ধরে বিয়ে করবে খুলনার মেয়েদেরকে। কী তাজ্জব ব্যাপার!

মুন্সিগঞ্জের ছেলেদের ব্যাপারেও মোটামুটি একই কথা প্রযোজ্য। তারা নিজেদের বোনদের বিয়ে দিবে চাঁদপুর আর কুমিল্লার ছেলেদের কাছে। কিন্তু নিজেরা বিয়ে করবে পুরান ঢাকায়। এ কারণে সম্প্রতি পুরান ঢাকার এক ব্যক্তির সাথে যখন আমার ফেসবুকে চ্যাট হচ্ছিল ,তখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের কেউ আছে কি না। যাই হোক, এ ধরনের উপনিবেশ টাইপ মনমানসিকতা বাদ দিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.