প্রথম আলোতে অনুমোদন না পাওয়ার রিপোর্টটা পড়লাম; সেখানে একজন কমেন্ট করেছেন যে, তাঁদের স্কুলে নাকি একজন টিচার ছিলেন যাঁর কাছে প্রাইভেট না পড়লে পাশ করা যেত না। এরকম টিচার আমাদের স্কুলেও (একরামুন্নেছা) ছিল, তিনি পারতেন না কিছুই, অথচ রাজনৈতিক ব্যাকআপ থাকার কারণে তিনি ছিলেন শিক্ষকদের লিডার। দুঃখজনকভাবে, দীর্ঘদিন বহিষ্কার থাকার পর তিনি আবার স্কুলে ফেরত এসেছেন এবং এবার এসেছেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে। কী কারণে জানি, চারপাশের সর্বত্র অযোগ্যরাই নেতা-ফেতা বনে যাচ্ছে !
যাই হোক, আসল কথায় আসি। গণস্বাস্থ্যের কিট যে সরকারের স্বাস্থ্য প্রশাসন যন্ত্র অনুমোদন দেবে না, এটা অনেকটা জানাই ছিল। গণস্বাস্থ্য তথা ড. জাফরুল্লাহ জলে বাস করে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করেছেন, সুতরাং তাদের কিট অনুমোদন পাবে কেন?
কিন্তু সরকার কি চাইলেই পারে না, এ কিটের কোথায় ইমপারফেকশন আছে, সেটা তাদের বিজ্ঞানীদের দিয়ে যাচাই করিয়ে এটাকে ব্যবহারোপযোগী পর্যায়ে আনতে? এ কিট যদি একেবারেই অকার্যকর হয়, তাহলে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের টিচারদের উদ্ভাবিত কিট কেন তারা টেস্ট করে দেখছে না, এটাকে কাজে লাগানো যায় কিনা?
জাফরুল্লাহ যে ভুল(!) গুলো করেছেন, সেগুলো হলো বিএনপিকে সমর্থন প্রদান, খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসার দাবী নিয়ে মুখ খোলা, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর পুরো ব্যাপারটা নিয়ে গেম খেলছে ও কালক্ষেপণ করছে – এমন অভিযোগ করা। তিনি আরো বলেছেন, এ কিটের অনুমোদন নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট লোকজন ‘পার্সেন্টেজ’-এর খেলায় মেতে উঠেছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘কে কত পার্সেন্ট পাবে সেটা এখনো ঠিক হয় নি, তাই কিটের অনুমোদনে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।’ তিনি তো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগে ‘ডিয়ার’ সামথিং (or someone) এর বিরুদ্ধে সরাসরি আঙ্গুল তুলেছেন। সুতরাং সরকারের প্রশাসন যন্ত্র যে তাঁর কিটের অনুমোদন দেবে না, এটা খুব স্বাভাবিক।
আবার এমনও হতে পারে, যে সকল প্রাইভেট হাসপাতাল করোনা টেস্টের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নিচ্ছে, তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে আশংকায় তারাই হয়তো উৎকোচ দিয়ে গণস্বাস্থ্যের কিটের অনুমোদন বাতিল করেছে। এটা তো আর জানতে বাকি নেই যে, বাংলাদেশ হলো সব সম্ভবের দেশ। টাকা ব্যয় করলে এখানে বাঘের দুধও পাওয়া যায়।
তৃতীয় সম্ভাব্য যে কারণ সেটা হলো, সরকার হয়তো নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্যই এ কিটের অনুমোদন দিতে রাজি নয়। একই কারণে হয়তো ঢাবি’র কিট বা অন্য কোনো র্যাপিড টেস্টিং কিট কখনোই অনুমোদন পাবে না এদেশে। র্যাপিড কিট যদি অনুমোদন পায়, তাহলে হয়তো দেখা যাবে, কয়েক দিনের মধ্যে লাখ লাখ করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। তখন সরকার ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে; বিশ্ববাসী প্রশ্ন করবে – করোনা ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার তাহলে কী করতে পেরেছে? পুরো পৃথিবীর কাছে অথর্ব এক সরকার হিসেবে প্রমাণিত হবে তারা। তখন তারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিবে। যা হোক, এগুলো সবই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, ফ্যাক্ট নয়। কাজেই এগুলো নিয়ে মাথা গরম করার কিছু নেই, আবার এগুলো ফেলে দেবার মতোও কিছু না।