পাবলো এসকোবারের নাম শুনেছেন? তিনি হলেন কলম্বিয়ার প্রাক্তন মাদক সম্রাট। তিনি তার যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাকে মাদকের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে নিয়েছিলেন এবং এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা নিজের পকেটস্থ করেছিলেন। যে-ই তার পথের কাঁটা হয়েছিল, তাকেই তিনি শেষ করেছেন। কয়েকশত পুলিশ ও বিচারকের মৃত্যুর জন্য দায়ী তিনি। এমনকি কলম্বিয়ার তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীও তাঁর বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলতে সাহস পেত না। অর্থ আর অস্ত্রের জোরে দীর্ঘদিন ধরে কলম্বিয়ার প্রতিটি সেক্টরই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। সত্যি বলতে কি, ডন হবার পর যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন তিনিই ছিলেন কলম্বিয়ার অঘোষিত শাসনকর্তা। কিন্তু তাঁর শেষটা ভালো হয় নি, ১৯৯৩ সালে সিআইএ-‘র হাতে তাঁকে মরতে হয়েছিল। জীবদ্দশায় তাঁর জন্য দুঃখের ব্যাপার হলো, তিনি যত অর্থ কামিয়েছিলেন তার বেশিরভাগই বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়েছিল। তিনি বালিশের মধ্যে, তোষকের নিচে এমনকি মাটির নিচেও অর্থ পুঁতে রাখতেন।
তবে মানুষ হিসেবে তিনি যেমনই হোন না কেন, নিজের সন্তানদেরকে অত্যধিক ভালোবাসতেন। এবার তাঁর সন্তানবৎসলতার একটি কাহিনী শোনা যাক। একবার তিনি তাঁর এক নাবালক মেয়েকে নিয়ে জঙ্গলে আশ্রয়ে নিয়েছিলেন, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে। সে রাতে প্রচণ্ড শীত পড়েছিল, তাঁর কাছে তেমন কোনো শীতবস্ত্র বা কম্বল ছিল না। তাই নিজের মেয়েকে শীতের হাত হতে বাচাঁতে সেই রাতে তিনি তাঁর সাথে থাকা কয়েক মিলিয়ন ডলার আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। টাকাগুলো পুড়ে যে উত্তাপ তৈরি করেছিল, তার দ্বারাই বাপ আর মেয়ে মিলে শীত নিবারণ করেছিলেন। সমাজে ভিলেন হিসেবে পরিচিত হলেও ঐদিন তিনি নিজেকে সন্তানবৎসল পিতা হিসেবে চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
এবার রামায়ণের কথাই ধরুন। রামায়ণ অনুসারে রাবণের আগে তাঁর দুই পুত্র নিহত হয়েছিলেন। এ নিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ রচনা করেন। এই কাব্যে রাবণকে ভিলেন হিসেবে নয়, বরং একজন সন্তানবৎসল পিতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাঁর পুত্র মেঘনাদ যখন মারা যান, তখন রাবণ তাঁর বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেঘনাদের মৃতদেহ সনাক্ত করার জন্য এদিক-ওদিক তাকাতে থাকেন। এসময় তাঁর বুকটা খা-খা করতে থাকেন। তিনি তাঁর মৃত সন্তানের জন্য অসীম মমতা আর শোক অনুভব করেন। পুত্রের মৃত্যুতে তাঁর পাষাণ হৃদয় কিছুটা হলেও গলে যায়, শোকে মুহ্যমান হন তিনি। তিনি তাঁর পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ হন।
পৃথিবীর প্রতিটি পিতাই সন্তানবৎসল। নিজে মানুষ হিসেবে ভালো বা খারাপ যেমনই হোন না কেন, সন্তানকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন।
Pingback: Bol na aar (Jeet + Koel) - গানের স্মৃতি - INFORMATION N KNOWLEDGE WORTH SHARING