smart people লিখে গুগলে সার্চ দিন, তারপর প্রাপ্ত ইমেজগুলো দেখেন। সেখানে পরিপাটিভাবে সজ্জিত বা কেতাদুরস্ত কারো ছবি দেখতে পাবেন না। কারণ বাংলাদেশে স্মার্টনেসের সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, বহির্বিশ্বে স্মার্টনেসের সংজ্ঞা আলাদা। আর এটাই স্মার্টনেসের ইউনিভার্সাল সংজ্ঞা; আমরা বাঙালীরা আসলে কুয়ার ব্যাঙ!
স্মার্টনেস হলো বুদ্ধিমত্তা ও মস্তিষ্কের প্রখরতা। এটাই স্মার্টনেসের সঠিক সংজ্ঞা। কিন্তু আমাদের দেশে মনে করা হয়, যারা পরিচ্ছন্ন, ফিটফাট পোশাক পরে এবং চটচট করে কথার জবাব দিতে পারে, তারাই স্মার্ট। অনেক শিক্ষিত লোকেরা এটাকেই স্মার্টনেসের সংজ্ঞা হিসেবে ধরে নিয়ে চাকুরি ক্ষেত্রে কেবল এ ধরনের লোকদেরকেই নিয়োগ দিতে আগ্রহী হন। পরিচ্ছন্নতা ও ফিটফাট থাকা যদিও জরুরী, তবে এগুলোর সাথে আরো কিছু দিকে নজর দিতে হবে কর্মী রিক্রুটের ক্ষেত্রে, আর সেটা হলো দৃষ্টিভঙ্গী। অনেকের দৃষ্টিভঙ্গী সঠিক নয়, এমনকি তারা সাধারণ লোকজনকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে, নিজের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা কাউকে দেখলেই ‘ঈর্ষাণ্বিত’ হয়ে পড়ে এবং তার ক্ষতি ঘটাতে চায়। এ ধরনের লোকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুব চতুর হয়ে থাকে, ফলে এদের স্বরূপ উদঘাটন করা চাট্টিখানি কথা নয়।
এজন্য নিয়োগকর্তাদেরকে আরো ধুর্ত হতে হবে এবং তাদের মাঝে কমপক্ষে একজন সাইকোলজিস্ট তো থাকতেই হবে। শুধুমাত্র পোশাক-আশাক ও কথাবার্তার ফিটনেস দেখে সিলেক্ট করা হলে ভুল লোক সিলেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমি এরকম বহু কেস দেখেছি যে, লোকটি দেখতে পরিচ্ছন্ন ও ফিটফাট হলেও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অশোভন আচরণ করে; যেমনঃ তুচ্ছ কারণে সহযাত্রীর সাথে মারামারি লাগিয়ে দেয়, বাপ-মা তুলে গালাগালি করে, অসহায় ও দুর্বলকে অত্যাচার করে। এমনকি তারা বেশ কিছু অশোভন কাজকর্মও করে, যেমনঃ নাক খোঁটাখুঁটি করা, খালি হাতে নাক ঝাঁড়া, বিনা কারণে (পাশের জনকে বিব্রত করতে) গলা খকখক করা ইত্যাদি। এখানে যে আচরণগুলোর কথা বললাম, সেগুলো স্মার্ট লোকের কাজকর্ম হতে পারে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশই বোধ হয় একমাত্র দেশ যেখানে যাদেরকে সমাজে ‘স্মার্ট’ হিসেবে ধরে নেয়া হয়, তাদের অনেকেই রাস্তাঘাটে ও চলার পথে এ ধরনের অশোভনীয় আচরণ করে থাকে।
বিদেশে স্মার্টনেস মানে হলো বুদ্ধিমত্তা ও মস্তিষ্কের প্রখরতা, যেমনটা আগেই বলা হয়েছে। যেমনঃ আইনস্টাইনকে সর্বকালের সেরা একজন স্মার্ট লোক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আদতে তিনি কী প্রকৃতির লোক ছিলেন, সেটা সবাই বোধ হয় জানেন। তিনি একই ধরনের পোশাক ডেইলি পড়তেন, যেগুলোর বেশির ভাগই ছিল ‘ব্যাগী’ বা অতিরিক্ত ঢিলেঢালা টাইপের। চুল আঁচড়াতেন না বললেই চলে, এমনকি পার্সোনাল হাইজিনেও তাঁর সমস্যা রয়েছিল বলে জানা যায়। তিনি চটপট উত্তর দিতে পারতেন না, যেমনঃ একবার যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘স্যার, বলেন তো, বায়ুতে শব্দের বেগ কত?’ তখন তিনি বললেন, ‘এসব তথ্য তো বইয়েই রয়েছে, তাই এগুলো আমার মাথায় ক্যারি করি না।’ তাহলে বোঝেন অবস্থা!
তার মানে এই না যে, আইনস্টাইন স্মার্ট ছিলেন না। সেটা তিনি অবশ্যই ছিলেন, উন্নত বিশ্বে স্মার্টনেসের যে সংজ্ঞা ব্যবহার করা হয়, সে অনুসারে তিনি অবশ্যই স্মার্ট। এবং বাংলাদেশেও সেটাই হওয়া উচিত। কাউকে স্মার্ট বলার আগে শুধু তার পোশাক-আশাক ও পরিচ্ছন্নতা দেখলেই চলবে না, তার জ্ঞানের পরিধি ও মানসিকতা সর্বোপরি গণমানুষকে ভালোবাসার সক্ষমতা আছে কিনা, সেগুলোও যাচাই করতে হবে।
তবে আইনস্টাইনের চেয়ে বেশি স্মার্ট লোক হয়তো তাঁর জীবদ্দশাতেই বেঁচে ছিলেন, আর তিনি হলেন সর্বকালের সেরা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিকোলা টেসলা। তিনি অতি উচ্চ মাপের ব্যবহারিক বিজ্ঞানী ছিলেন। আইনস্টাইন যেমন তাত্ত্বিক বিজ্ঞানী ছিলেন, তেমনি টেসলা ছিলেন ‘ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যাল’ বিজ্ঞানী। একবার আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘স্যার, বর্তমান যুগের সবচেয়ে স্মার্ট লোক হতে পেরে আপনার কেমন অনুভূতি হয়?’ তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘কী জানি! সেটা আপনি বরং নিকোলা টেসলাকেই জিজ্ঞেস করুন।’ অর্থাৎ আইনস্টাইনের মতে, টেসলা তাঁর চেয়েও বেশি স্মার্ট ছিলেন।
আইনস্টাইন অবশ্য লোক চিনতে ভুল করেন নি, কারণ টেসলা যন্ত্র উদ্ভাবন করার আগে কোনো কাগজে তার ডিজাইন আঁকতেন না, বরং সেটা করতেন তিনি নিজের মাথায়। পরে মাথাতেই সেই যন্ত্রের ডিজাইন মডিফাই বা চেঞ্জ করতেন এবং বিভিন্ন কন্ডিশনে যন্ত্রটি ‘রান’ করলে কী হবে সেটার সাইমুলেশন তিনি তাঁর মগজেই করতেন। অর্থাৎ টেসলার ছিল ফটোগ্রাফিক মেমরি। অথচ জন্মসূত্রে ক্রোয়েশিয়া বা সার্বিয়ার নাগরিক হওয়ার কারণে আমেরিকান মিডিয়া তাঁর নাম ইতিহাসের পাতা হতে মুছে ফেলতে চেয়েছে, কারণ উক্ত দেশগুলো একসময় সোভিয়েট ইউনিয়নের মধ্যে ছিল। যাই হোক, টেসলা সম্পর্কে একটি আর্টিক্যাল রয়েছে এই ব্লগে, সেটা পঠনের আহ্বান থাকলো; রচনাটির শিরোনাম হলো, ‘সর্বকালের সেরা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার’।