সালমান খানের পিতা হিসেবেই অধিক পরিচিত সেলিম খান। তিনি অল্প কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও একজন চিত্রনাট্যকার হিসেবে বলিউডে সমধিক পরিচিত। তিনি চারজন সন্তান জন্ম দিয়েছেনঃ বড় পুত্র সালমান খান, মেঝো পুত্র আরবাজ খান, ছোট পুত্র সোহেল খান এবং একমাত্র আপন কন্যা আলভিরা। এছাড়া সেলিম খান এবং তাঁর তৎকালীন স্ত্রী একটি কন্যাশিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন, যার নাম রাখেন অর্পিতা খান।
সেলিম খান একসময় জাভেদ আখতারের সাথে মিলে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখতেন। সে সময় সেলিম ছবির কাহিনী ও চরিত্রসমূহ পরিকল্পনা করতেন এবং জাভেদ সংলাপ লিখতেন।
সেলিম খান ভারতের মধ্যপ্রদেশে এক স্বচ্ছল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা আফগানিস্তান হতে ভারতে মাইগ্রেশন করেছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন মধ্যপ্রদেশের ‘ইন্দোর’ নগরীতে পুলিশের ডিআইজি। ব্রিটিশ আমলে ভারতীয়রা পুলিশে এর চেয়ে বেশি উচুঁ পদে যেতে পারতেন না। সেলিম খানের যখন ১৪ বছর বয়স তখন তাঁর পিতা মারা যান। এরও ৫ বছর আগে তাঁর মা মারা যান। সেলিম খানের মা মারা যাওয়ার আগে বেশ কয়েক বছর যক্ষ্মায় ভুগেছিলেন। এজন্য ছোটবেলাতেই কখনো নিজ মায়ের কাছে যেতে পারতেন না সেলিম খান এবং তাঁর ভাইবোনেরা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সেলিম ছিলেন তাঁর পিতামাতার কনিষ্ঠ সন্তান।
প্রথমে মা এবং পরে বাবা মারা যাওয়ার পর সেলিম খানের দেখাশোনা করতেন তাঁর বড় ভাইয়েরা, সে বিষয়ে কোনো অবহেলা হয় নি; কারণ তাঁদের পিতা প্রচুর ধনসম্পদ রেখে গিয়েছিলেন। সেলিম যখন কলেজে পড়তেন, তখনই তাঁকে ব্যক্তিগত গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন বড় ভাইয়েরা।
জাভেদ আখতারের সাথে সম্মিলিতভাবে তিনি ছয়টি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার অর্জন করেন। এছাড়া পরবর্তীতে সেলিম খান ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরষ্কার লাভ করেন, যেটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পুরষ্কার।
কলেজে পড়ার সময় সেলিম খান একজন ভালো খেলোয়াড় ছিলেন (ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কলেজ বলা হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে যেটা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সেটা ভারতে শুধু ‘কলেজ’)। ভালো খেলোয়াড়, বিশেষ করে ভালো ক্রিকেটার ছিলেন বলেই ডিগ্রীতে তেমন একটা ভালো রেজাল্ট না করলেও তিনি মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান (অর্থাৎ খেলোয়াড় কোটায়)।
এবার সেলিমের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বলা যাক। তিনি দুটি বিবাহ করেছেনঃ তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম সুশিলা চরক, অর্থাৎ তিনি বিয়ের আগে হিন্দু ছিলেন এবং বিয়ের পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সালমা খান নাম ধারণ করেন। সালমান খানের এই মা ১৯৭৪ সালে মারা যান, যখন সালমানের বয়স মাত্র ৯। এরপর ১৯৮১ সালে সেলিম খান দ্বিতীয় বিবাহ করেন, হেলেন অ্যানি রিচার্ডসন নামক এক নারীকে, যিনি বিয়ের আগে থেকে শুরু করে অদ্যাবধি খ্রিস্টান। সৎ মায়ের সাথে সালমান খানদের বেশ ভালো সম্পর্ক।
এবার সেলিম খান সম্পর্কে একটি মজার ঘটনা বলা যাক। আপনি জানেন কি, সেলিম খান বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একজন বিরাট ফ্যান বা ভক্ত? তিনি নজরুলের প্রতিটি কবিতা পড়েছেন। গত বছর সালমান খান যখন ক্যাটরিনা কাইফকে নিয়ে বাংলাদেশে একটা অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে আসেন, তখন সালমান দর্শকদের সামনে জানান যে, তাঁর পিতা সেলিম খান নজরুলের একজন বিশাল ভক্ত। এবং এই তথ্যটি বাংলাদেশের লোকজনকে জানাতে সালমানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর পিতা সেলিম খান।