শুভশ্রী গাঙ্গুলি ১৯৮৯ বা ‘৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সে হিসেবে তাঁর বয়স প্রায় ২৯ বা ৩০ বছর। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবে বর্তমানে তাঁর বাড়ি কোলকাতায়। তিনি একজন অভিনেত্রী, মডেল এবং চিত্রনাট্যকার। মিডিয়া জগতে তিনি ২০০৭ সাল হতে বিচরণ করছেন। শ্রুতি আছে যে, ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর ‘চ্যালেঞ্জ’ ছবিটি সুপারহিট হবার কিছুকাল পরেই তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যার দরুণ বেশ কয়েক বছর তিনি বিনোদনজগত থেকে দূরে থাকেন।
চলচ্চিত্র জগত তাঁর খোঁজ পায় ‘ফেয়ারএভার আনন্দলোক নায়িকার খোঁজে’ টিভি প্রোগ্রামের মাধ্যমে, যেটিতে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, তাঁর সর্বপ্রথম অভিনয় কোনো বাংলা ছবিতে নয়, বরং উড়িষ্যার একটি ছবিতে যার নাম Mate Ta Love Helare । ছবিটির নামের কী উচ্চারণ, সেটা আপনারাই নেটে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৮ সালে।
তবে প্রথম যে বাংলা ছবিতে তিনি কাজ করেন, তার নাম ‘পিতৃভূমি’। এটিও মুক্তি পায় ২০০৮ সালে। ছবিটিতে তিনি সহযোগী অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম ‘ঝুমা’, যেটা জিৎ-এর কাজিন ছিল। ছবিটি পরিচালনা করেন প্রভাত রয়। অভিনেতা শাকিব খানের সাথে শুভশ্রীর ছবি ‘নবাব’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যবসার দিক থেকে রেকর্ড করেছে এবং সাম্প্রতিককালে (গত কয়েক বছরে) মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে সফলতম।
পিতৃভূমির পর ‘বাজিমাৎ’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি, সেখানে তার হিরো ছিলেন সোহম চক্রবর্তী। এটি মোটামুটি ব্যবসাসফল হলেও স্পটলাইটে আসতে পারে নি। তবে ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চ্যালেঞ্জ’ এবং ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ ছবিদ্বয়ের মাধ্যমে শুভশ্রী লাইমলাইটে চলে আসেন এবং টলিউডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। উভয় ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন দেব (দীপক অধিকারী)। মজার ব্যাপার হলো, দুটি ছবিই কিন্তু রিমেক। ‘চ্যালেঞ্জ’ হলো ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিল’ ছবির রিমেক এবং ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ হলো ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দী ছবি ‘নমস্তে লন্ডন’-এর রিমেক।
এরপর ২০১১ সালে শুভশ্রী অভিনীত ‘রোমিও’ ছবিটি মুক্তি পায়, ‘১২ সালে মুক্তি পায় ‘খোকাবাবু’ ছবিটি। এ দুটি ছবিতেও শুভশ্রীর নায়ক ছিলেন দেব। এরপর একে একে শুভশ্রীর বহু ছবি মুক্তি পেতে থাকে। সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশেও শুভশ্রী ব্যাপক জনপ্রিয়। তাঁকে বিভিন্ন ছবিতে বহুসংখ্যক আইটেম গানে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দেব ষোল আনা’ এবং ‘নাটাই তো আমার হাতে’।
এবার শুভশ্রী সম্পর্কে একটি অন্য ধরনের খবর বলি, যেটা ২০১৬ সালে বিভিন্ন কাগুজে এবং অনলাইন পত্রিকায় এসেছিল, আর সেটা হলো তাঁর যৌন হেনস্থা হওয়ার খবর। সেটা পশ্চিমবঙ্গের কোন এলাকায় হয়েছিল, সেটা মনে নেই। তবে এটা কোনো একটা স্কুল ক্যাম্পাসে হয়েছিল। এলাকার নেতা বা ছেলেপুলেরা শুভশ্রীকে টাকার বিনিময়ে এনেছিল স্টেজ পারফর্ম করতে, সেখানে মানুষের ভিড় একসময় বেসামাল হয়ে পড়ে, যা স্থানীয় পুলিশগণ সামলাতে পারেন নি। তখন শুভশ্রী ভিড়ের মধ্যে পড়ায় বেশ কয়েকজন বখাটে যুবক তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। যুবকেরা হয়তো ভেবেছিল, শুভশ্রী ব্যাপারটা চেপে যাবেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে মঞ্চে উঠে তাঁকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে পারফর্ম না করেই সেখান থেকে চলে যান।
এবার আসি শুভশ্রীর বিবাহ এবং প্রেমজীবন সম্পর্কে। যেমনটি এ রচনার শুরুর দিকে বলা হয়েছিল, ‘চ্যালেঞ্জ’ এবং ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ ছবিদ্বয়ের মুক্তি ও সাফল্যর পর শুভশ্রী খুব সম্ভবতঃ বিবাহ করেছিলেন এবং দু’-এক বছর পরেই সেখান থেকে ডিভোর্স পান। তবে তিনি এ বিয়ের বিষয়টি চেপে যেতে পছন্দ করেন। এরপর দীর্ঘ সময় নায়ক দেব-এর সাথে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন শুনা যায়। এমনকি একটা সময় এ খবরও চাউর হয় যে, তাঁরা দু’জন নাকি বিবাহ করেছেন। তবে প্রেমের ব্যাপারটা সত্য হলেও বিয়ের ব্যাপারটি সঠিক নয়। এরপর শুভশ্রী চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক রাজ চক্রবর্তীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান এবং বেশ দীর্ঘ একটা সময় প্রেম ও লিভ টুগেদারের পর তাঁরা দু’জন বিয়ে করেন। বিয়ের পর বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও নবদম্পতি সুখেই রয়েছে বলে শোনা যায়।
সবশেষে শুভশ্রী কী কী পুরষ্কার পেয়েছেন, সেটাও জেনে রাখা উচিত। নায়িকা হিসেবে তাঁর প্রথম বাংলা ছবি ‘বাজিমাৎ’-এ অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগতা অভিনেত্রী হিসেবে আনন্দলোক পুরষ্কার পান। এছাড়া ‘খোকা ৪২০’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০১৩ সালে এবং ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০১৪ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ‘কালাকার পুরষ্কার’ অর্জন করেন। ‘বস ২’ এবং ‘নবাব’ চলচ্চিত্রদ্বয়ে তাঁর অনবদ্য অভিনয়ের জন্য ২০১৮ সালে ‘টলি কুইন অফ দ্য ইয়ার’ হিসেবে তিনি কালাকার পুরষ্কার লাভ করেন।