‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি বর্তমানে একটি গালির মতো হয়ে গেছে। বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে একজন আরেকজনকে তুচ্ছার্থে বা টিজ করার উদ্দেশ্যে এ গালিটি দিয়ে থাকে। এর দ্বারা মেইনলি বুঝানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে, ‘আমি স্থানীয়, তুই ভিনদেশী। আমি কেউকেটা, তুই তুচ্ছ।’ যারা এ জাতীয় অমানবিক গালি দিয়ে থাকেন, তাদের উদ্দেশ্যে অামার বক্তব্য হচ্ছে, অাপনারা বা আপনাদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৭১ সালে কী অবস্থায় ছিলেন? তারা কি ঐ সময় বহাল তবিয়তে ছিলেন? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে কি তারা রাজাকার ছিলেন? আর যদি তারাও ঐ সময় উদ্বাস্তু বা অসহায় হয়ে থাকেন, তাহলে রোহিঙ্গাদের এত নিচু চোখে দেখেন কেন?
এ কথাগুলো হয়তো অনেক আগেই বলা উচিত ছিল, যখন রোহিঙ্গা সমস্যা প্রকট ছিল, অর্থাৎ রোহিঙ্গারা দলে দলে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল। আসলে কোনো একটা কারণে এই ব্লগটিতে লেখালেখির ব্যাপারে ডিমোটিভেটেড হয়ে গিয়েছিলাম। রোহিঙ্গা সমস্যা যেহেতু এখনো সমাধান হয় নি, তাই শেষ পর্যন্ত এ কথাগুলো বলতে বাধ্য হলাম।
যেমনটি বলছিলাম, নিজেরা কমফোর্ট জোনে আছেন এবং চিরকাল তাই থাকবেন – এমনটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। জাস্ট কয়েকটা সম্ভাবনা বিবেচনা করুনঃ
(১) নিশ্চয়ই অবগত আছেন বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে। আওয়ামী লীগ যেভাবে ‘কাউট্টা’র মতো ক্ষমতা অাঁকড়ে ধরে আছে, তাতে যে কোনো সময়ই একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে বাংলাদেশে। তখন এই কমফোর্ট জোনের পাবলিকগুলো কোথায় যাবে তাই ভাবছি।
(২) সরকার পাবনায় একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছে, আরেকটি করার পরিকল্পনা করছে বরগুনায়। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রেও যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন বা জাপানের মতো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে দেশে অবস্থান করার মতো আর জায়গা থাকবে না কারোর জন্য, কারণ দেশটা যে বেজায় ছোট! সুতরাং উদ্বাস্তু বা ‘রোহিংগা’ হতে পারেন যে কেউ, যখন তখন – ভুলে গেলে চলবে না।
(৩) বাংলাদেশে যে কোনো সময়ই একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই জানেন। আল্লাহ না করুক, তাই যদি হয় তাহলে অনেক লোকই তো বাস্তুচ্যুত হবেন, এরা তখন কোথায় যাবেন?
এ সকল বিবেচনায় নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আরাম করার সময় এখনো আসে নি বাংলাদেশিদের জন্য। আমেরিকার মতো দেশে জনগণ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না, কখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় আর তাদের উপর এটম বোমা এসে পড়ে সে দুশ্চিন্তায়, বাংলাদেশে তো কোন ছার! বাংলাদেশ এখনো নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন বা নরওয়ে হয়ে যায় নি যে, সকলে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে ঘুমাবেন আর উদ্বাস্তুদের দেখলেই বলবেন, ‘রোহিঙ্গা’।
আশা করি আর কোনো ব্যাখ্যার দরকার নেই। নিজেদের যে অবস্থা হতে পারে যে কোনো সময়, সে অবস্থায় বর্তমানে যারা আছে, তাদেরকে উপহাস করার মতো দুঃসাহস করবেন না। আমরা বাংলাদেশিরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি মানবিক বিবেচনায়, তারা মুসলিম বলে নয়।