সংক্রমণের ভয়ে আমরা প্রায় সবাই ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অভ্যাস্ত হয়ে উঠেছি। যদিও হাতের জীবাণু দূর করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বেশ কার্যকরী, তবে এর অত্যধিক ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে তা ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলতে পারে যা আমাদের ত্বক এবং শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের সুস্থ রাখতে ভালো মাইক্রোবায়োমগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রচুর মাইক্রোবায়োমকে মেরে ফেলে। যদিও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রে কতখানি হলে তাকে অতিরিক্ত বলা যাবে তা নির্ধারণ করা কঠিন, এটি হিসাব করা যাবে যখন আপনি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার এড়াতে পারবেন।
হিতে বিপরীত যাতে না হয় সেজন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের আগে জেনে নিন কখন এটি ব্যবহার করা জরুরি নয়-
সাবান-পানির ব্যবস্থা থাকলে
আপনার যদি সাবান-পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকে, তবে তাই করা উচিত। হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রয়োজন যখন সেই ব্যবস্থা না থাকে। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর মতে, জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো সাবান এবং পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য হাত ধুয়ে ফেলা। সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ফলে জীবাণু দূর হয়। সম্ভব হলে সব পরিস্থিতিতে আপনার হাত পরিষ্কার করার জন্য সাবান এবং পানি প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত।
আপনার হাত দৃশ্যমান নোংরা হলে
আপনি যদি স্যানিটাইজার দিয়ে ময়লা হাত পরিষ্কার করার চেষ্টা করে থাকেন তবে জেনে রাখুন এটি কেবল ঝামেলাই বাড়ায়। অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ময়লা অপসারণ করে না। হাত ময়লা থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া মারার ক্ষেত্রে কম কার্যকর হবে। ময়লা হাত পরিষ্কার করার জন্য সাবান এবং পানি ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, বাগান করা, খেলাধুলা, বাইরে খেলা করার পরে আপনাকে অবশ্যই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার এড়াতে হবে।
যখন কেউ আপনার পাশে হাঁচি দেয়
সত্যি বলুন, আপনার পাশে বসে কেউ হাঁচি দিলে আপনি কতবার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছেন? অনেক বার, তাই না? আসল বিষয়টি হলো কেউ যখন আপনার কাছাকাছি কাশি করে বা হাঁচি দেয়, আপনি শ্বাস নেয়ার সময় বাতাসের ফোঁটা থেকে সংক্রমণটি ধরবেন। দূষিত হাত সংক্রমণ ধরার একমাত্র উপায় নয়। আপনার কাছে যখন কেউ কাশি বা হাঁচি দিচ্ছেন তখন বারবার আপনার হাত স্যানিটাইজ করবেন না।
আপনি কাউকে বা কিছুই স্পর্শ করেনি
আমাদের মধ্যে অনেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন অভ্যাসের বাইরে। তবে একটি নতুন গবেষণা বলছে, ঘন ঘন এর ব্যবহার প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতিরিক্ত ব্যবহারের সাথে সাথে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। আমরা যত বেশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি ততই অ্যালকোহল সহ্য করতে পারা জীবাণু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। সুতরাং, স্যানিটাইজার কেবল প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্যই সংরক্ষণ করুন।
আপনি মাত্র ৫ মিনিট আগে স্যানিটাইজ করেছেন
আপনার হ্যান্ড ক্রিম কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে? যত লোশনই মাখেন না কেন, হাত শুষ্কই থাকছে? এর জন্য দায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের জ্বালা এবং শুকনো হাতের কারণ হতে পারে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার সব সময় ব্যবহার না করে শুধুমাত্র প্রয়োজনে ব্যবহার করা ভালো। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর মতে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রয়োগের সঠিক উপায় হলো প্রায় ২০ সেকেন্ডের জন্য উভয় হাতেই এপিঠ-ওপিঠ এটি ঘষতে থাকা।
যখন শিশুদের আশেপাশে থাকেন
হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিশুদের জন্য ব্যবহার করা নিরাপদ কারণ স্যানিটাইজারের ফলে শরীরে অ্যালকোহলের কোনো উল্লেখযোগ্য শোষণ হয় না। তবে অ্যালকোহল-ভিত্তিক স্যানিটাইজারের ইনজেশন বা শ্বাস গ্রহণের ফলে আঘাত বা বিষক্রিয়া হতে পারে। ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, মার্কিন বিষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলো শিশুদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এক্সপোজার সম্পর্কে প্রায় ৮৫,০০০ কল পেয়েছিল।
ফ্লু হলে
ধরুন আপনার ফ্লু হয়ে গেল, যদিও আপনি নাক ঝাড়ার পরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। তার মানে এই নয় যে আপনি বাইরে যাওয়াই ভালো। হ্যান্ড স্যানিটাইজার অনেক সংক্রমণ প্রতিরোধের একটি প্রয়োজনীয় উপায়। তবে আপনার ফ্লু হলে বাড়িতেই থাকাই ভালো।
সূত্রঃ jagonews24.com, ২৭ মে