অাপনি যদি এই আর্টিকেলটি সকালে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই ভাবছেন কীভাবে দিনটি শুরু করবেন। আর যদি রাতে পড়ে থাকেন তাহলে হয়তো ভাবছেন, কোন জিনিসগুলো কাল সকালে করবেন না। সেক্ষেত্রে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং জানতে পারবেন, কোন ১০টি কাজ সকালে করা ঠিক নয়। এই কাজগুলো পরিহার করলে আপনার দিনটি সঠিকভাবে শুরু হবে এবং দিনভর বেশি পরিমাণ শক্তি এবং আনন্দ লাভ করবেন, এমনকি স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটবে।
গরম পানিতে গোসল
একটি জরিপে দেখা গেছে যে, ৯০ শতাংশ লোক সকালে গরম পানিতে গোসল করে। এধরনের গোসল আপনার দেহে একটি শিথিলায়ন বা রিলাক্সিং অবস্থা তৈরি করে, এতে করে আপনি আবার বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তে চাইবেন।
আরেকটা কারণ হলো, গরম পানির গোসল আপনার দেহত্বককে অতিমাত্রায় শুষ্ক করে তোলে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আপনার ত্বক যদি শক্ত বা খসখসে টাইপের হয়, তাহলে এর পেছনে একটি সম্ভাব্য কারণ হলো – গরম পানিতে গোসলে অভ্যাসটি।
ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে শুধু যে এই বিষয়গুলো আপনি এড়াতে পারবেন, তা নয়; বরং বাড়তি কিছু সুবিধাও পাবেন। ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের ফলে সকালে আপনি খুব ফ্রেশ অনুভব করবেন। এটি অাপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর মানে হলো, এরূপ গোসলের পর আপনি স্কুল বা কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবেন এবং অাপনার ঠাণ্ডা বা সর্দিও কম লাগবে। যেসকল লোকজন গণপরিবহনে করে যাতায়াত করেন, তাদের জন্য এটা খুবই ভালো হয়।
ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের ফলে আপনার ত্বক শুষ্ক বা খসখসে হয়ে যায় না। সুতরাং শিশুদের মতো মোলায়েম ত্বক পেতে চাইলে সর্বদা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন। উপরন্তু, গবেষকদের মতে, এরূপ গোসলের ফলে আপনার ওজন বছরে ৯ পাউন্ডের মতো কমতে পারে; এর কারণ হলো ঠাণ্ডা পানিতে গোসল আপনার দেহের বিপাক কার্যক্রম ত্বরাণ্বিত করে। অতএব, আপনি যদি ভারী ব্রেকফাস্ট গ্রহণ করতে চান, তাহলে এর আগে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে নিবেন, এতে করে ঐ খাবার খুব সহজেই হজম হয়ে যাবে।
কালো কফি সেবন
সকাল সকাল কালো কফি সেবনের ফলে আপনার মধ্যে উদ্বিগ্নতা বাড়তে পারে। যদি আপনার মিটিং বা প্রেজেন্টেশন থাকে, তাহলে অবশ্য এটা সেবন করতে পারেন, ফলে আপনি চট করে চাঙা হয়ে যাবেন। তবে এটি সেবনের ফলে প্রেজেন্টেশনের সময় আপনি বেশ নার্ভাসবোধও করতে পারেন।
এছাড়া খালি পেটে কালো কফি সেবনের ফলে আপনার পেটে প্রচুর গ্যাস জমা হতে পারে। তাই অফিসে লজ্জাকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না চাইলে, এটি পরিহার করুন। আর একান্তই কফি পান করতে হলে এর সাথে কিছু দুধ বা ক্রিম মিশিয়ে নিন। ডেইরি খাবার আপনাকে রিলাক্স বা শিথিলায়ন করতে সহায়তা করে, তাই কালো কফি সেবনের ফলে যে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টির আশংকা থাকে, সেটিকে পাশ কাটানো যায়। সকালে কফি সেবনের সবচেয়ে ভালো সময় হলো, ঘুম থেকে ওঠার ৩-৪ ঘণ্টা পর।
‘সিরিয়াল’ খাওয়া
এক জরিপে দেখা গেছে, জনগণের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় সকালের নাশতা হলো সিরিয়াল। কিন্তু সিরিয়ালের সমস্যা হলো, এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। অতিরিক্ত চিনি আপনাকে সহজেই ক্লান্ত করে দিবে, কারণ অতিরিক্ত চিনির কারণে রক্তে অত্যধিক পরিমাণে ইনসুলিন যায়। এই প্রভাব কেটে যাওয়ার পরও দেহ বেশ ক্লান্তবোধ করে। একই কারণে সকালে বেশি ডেইরি পণ্য (যেমনঃ দুধ, দই, আইসক্রিম) এবং তাজা ফল খাবেন না।
অনেক স্বাস্থ্যবিদের মতে, সকালে সিরিয়াল খাওয়ার চেয়ে বরং একখণ্ড পিজা খাওয়া উত্তম। কারণে পিজায় থাকে চর্বি, প্রোটিন এবং শর্করা, ফলে একে মোটামুটি সুষম খাদ্য বলা যেতে পারে। শুধু মনে রাখবেন, এক খণ্ডের চেয়ে বেশি পিজা খাবেন না। এর কারণ হলো, পিজা অতটা স্বাস্থ্যকর খাবার নয়। প্রকৃতপক্ষে, স্বাস্থ্যকর সকালের নাশতা হলো ডিম সিদ্ধ/ভাজি, পনির এবং সামান্য ভেজিটাবল।
ইমেইল চেক করা
সকালে ইমেইল চেক করা শুরু করলে কীভাবে আপনার সময় চলে যাবে, সেটা আপনি টেরই পাবেন না। শুধু তাই নয়, এটা আপনার কর্মদিবসকে দীর্ঘায়িত করে তোলে। আসলে কর্মস্থলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মনটাকে ফ্রেশ রাখা জরুরী। তাই ঘুম থেকে ওঠার কয়েক ঘণ্টা পর ইমেইল চেক করুন। এতে করে কোন জিনিসটা আগে করতে হবে, আর কোনটা পরে – সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সুবিধা হবে।
পোশাক নির্বাচন করা
সকালে যদি আপনি পোশাক নির্বাচন করতে শুরু করেন, তাহলে বেশ কিছু সময়ের অপচয় হবে, তাই সেটা আগের রাতেই করে রাখুন। সফল লোকেরা তো একই ডিজাইন ও রঙের একাধিক পোশাক ব্যবহার করে থাকেন, যাতে করে পোশাক নির্বাচনে ভুলেও সময়ের অপচয় না হয়। এর মধ্যে রয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ ও আলবার্ট আইনস্টাইন।
তবে আপনি যদি এঁদের মতো হতে না চান, তাহলে সেটারও একটা উপায় আছে। আপনার ওয়ারড্রোবে কতসংখ্যক জামাকাপড় রাখুন, যেগুলো আপনি পছন্দ করেন। বহুসংখ্যক র্যান্ডম জামাকাপড় কেনা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে শুধু আপনার সময় নয়, বরং আপনার অর্থেরও সাশ্রয় হবে।