সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে করোনার তাণ্ডব কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সংক্রমণ ও দৈনিক মৃত্যুর হার সেখানে কমছে, আর বাংলাদেশে বর্তমানে সেটা বাড়ছে। বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহে গড়ে ৫৬ জন করে করোনায় মারা গেছে। দৈনিক সংক্রমণের হার ও মৃত্যুসংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এখানে, যা নিশ্চিতভাবে একটি অশনীসংকেত।
আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে সম্প্রতি যে সংক্রমণগুলো হয়েছে তার শতকরা প্রায় ৬৮ ভাগই হলো করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দরুন। তার মানে ডেল্টা ধরন দ্বারা এখন দেশে ব্যাপক হারে সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে। জানামতে, এই ভ্যারিয়েন্ট খুবই সংক্রামক এবং ইয়াং জেনারেশনকে পর্যন্ত নাজেহাল করে ছাড়ে। তাই এসব বিবেচনায় নিয়ে এবং সংক্রমণ ও মৃত্যুসংখ্যার ঊর্দ্ধগতি লক্ষ্য করে এটা স্পষ্ট যে, দেশে করোনার আরেকটি ঢেউ বা ওয়েভ উঠছে। এটি দ্বিতীয় ওয়েভ নয়, বরং তৃতীয় ওয়েভ। শীতকাল শেষে এপ্রিলের শুরুর দিকে যখন দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হুহু করে বাড়তে শুরু করেছিল, তখন সরকার কঠোর লকডাউন দিয়েছিল। সেটা করে অল্পতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিয়েছিল সরকার।
কিন্তু এবার কী হয় কে জানে! ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আসুক আর ‘স্পেনিশ’ ভ্যারিয়েন্টই আসুক, লোকজন করোনার স্বাস্থ্যবিধি দিনদিন বেশি করে উপেক্ষা করছে। তাদের স্বাস্থ্যবিধি না মানা দেখে মনেই হয় না যে, দেশে এবং সারা বিশ্বে একটি মহামারি চলছে। তার উপর সরকার বলছে, এবার নাকি আর সর্বাত্মক লকডাউন দেবে না, শুধু পরিস্থিতি খারাপ হলে এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেবে।
ভারতে বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নামছে, অথচ বাংলাদেশে তৃতীয় ঢেউ উঠছে – এ বিষয়টি এখন ব্যাখ্যা করি। বাংলাদেশে যখন করোনার প্রথম ঢেউ দেখা দেয় – গত বছরের মার্চ মাসে, তখন ভারতও প্রথম ঢেউ মোকাবেলা শুরু করে। এতে তারা বেশ সফল হয়। ঐ সময় ভারতে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ খুবই কম ছিল। তাই তো, তারা ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এসব দেশকে করোনার চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়ে সাহায্য করতে পেরেছিল। কিন্তু এ বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ উঠতে শুরু করলো, তখন বাংলাদেশ সরকার কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে সেটা সামাল দিলেও ভারত তা করতে পারে নি। তারা লকডাউন দিতে অনেক বেশি দেরি করেছে, সামগ্রিক লকডাউন কখনো দেয় নি, কেবল এলাকাভিত্তিক লকডাউন দিয়েছে। তাই তারা এখনো করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলাচ্ছে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ঢেউ সফলভাবে সামলালেও করোনা ভাইরাসের ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এবার তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে যেভাবে ইমিগ্রেশন ঘটে, তাতে বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যে ছড়িয়ে পড়বে, সেটা অবশ্যম্ভাবী ছিল।
উপরের ছবিতে দেশে করোনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ সম্পর্কে আমার প্রেডিকশন তুলে ধরা হয়েছে। আমার ধারণা ছিল, দেশে দ্বিতীয় ঢেউটা দীর্ঘায়িত হবে, সৌভাগ্যক্রমে সেটা হয় নি।
তৃতীয় ওয়েভে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কেমন হবে?
এ প্রসঙ্গে কিছু আশার কথা শুনিয়ে রাখি দেশবাসীকে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ভারতে করোনায় মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লোকজন জাংকফুড খেয়ে অভ্যস্ত, তারা শাকসবজি কম খায়, তাই তারা অপুষ্টিতে ভোগে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। একারণে সেখানে করোনায় মৃত্যুহার বেশি। ব্রাজিল ও ভারতে মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ হলো, এ দুটি দেশে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুবই বেশি। এ রোগে দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, তাই ব্রাজিল ও ভারতে করোনায় মৃত্যুহার এত বেশি। ভারত বা ব্রাজিলের মতো আমাদের দেশে অবাধ যৌনতার সুযোগ নেই, তাই এদেশে এইডসও কম। একারণে আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা হচ্ছে, দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কখনোই খুব একটা বেশি হবে না।