প্রিয়াংকা চোপড়া সম্পর্কে অজানা তথ্য (Interesting info about Priyanka Chopra)

প্রিয়াংকা চোপড়া ১৯৮২ সালের ১৮ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন, সে হিসেবে তাঁর বয়স হওয়ার কথা ৩৬ বছর। তিনি একজন ভারতীয় অভিনেত্রী, গায়িকা, চলচ্চিত্র প্রযোজক, মানবসেবী এবং ২০০০ সালের মিস ওয়ার্ল্ড বিজয়ী। ২০০০ সালের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় আরেক ভারতীয় সুন্দরী চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেনঃ তিনি হলেন লারা দত্ত। কিন্তু কজন লারাকে মনে রেখেছে? এর কারণ হলো বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার পর লারা তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারেন নি; তবে প্রিয়াংকা ঠিকই পেরেছেন। আর তাই তিনি বহু পদের পুরষ্কার পেয়েছেন আজ পর্যন্ত। অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার এবংপাঁচটি ক্যাটাগরিতে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০১৬ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরষ্কার দেয়, যা ভারতের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য চতুর্থ সম্মানজনক পুরষ্কার। ২০১৬ সালের টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় স্থান দেয়। আর ২০১৭ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় স্থান দেয়।
এত সাফল্য যাঁর পকেটে তাঁর ছেলেবেলাটাও বেশ সাফল্যের ছিল – এমনটা ধরে নিতে চাইবেন নিশ্চয়ই। তবে না, ছেলেবেলাটা খুব সুখকর ছিল না প্রিয়াংকারঃ বিশেষ করে আমেরিকায় যখন পড়াশুনা করতেন তখনকার সময়টা। সে সময় তিনি তাঁর খালার সাথে থাকতেন। তাঁকে তাঁর সহপাঠীদের অনেকে গায়ের রং নিয়ে উপহাস করতো (‘ব্রাউনি’ বলে ডাকতো), কারণ তাদের মতো ফর্সা রং ছিল না প্রিয়াংকার। এমনকি তাঁর পায়ে যে ছোপছোপ সাদা দাগ ছিল, সেটা নিয়ে একজন নিগ্রো মেয়ে তাঁকে উপহাস করেছিল। আজ প্রিয়াংকা অহংকার করে বলেন, “আমার সেই পায়ের মডেলিং-এর উপর নির্ভর করে আজ ১২টা ব্র্যান্ড চলে।” প্রিয়াংকার পরিবারের সবচেয়ে পজেটিভ দিক হলোঃ তাঁর বাবা-মা দু’জনেই ভারতীয় আর্মিতে ডাক্তার ছিলেন। চাকুরির সুবাদে তাঁদের পরিবারকে ভারতের বহুরাজ্যের বহু নগরীতে বাস করতে হয়েছে, যেটা প্রিয়াংকা প্রকারান্তরে উপভোগই করেছেন – তাঁর ভাষ্যমতে।




এবার তাঁর পরিবার ও ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে আরো কিছু বলা যাক। প্রিয়াংকা বিহার রাজ্যের জামশেদপুরে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে ঝাড়খন্ড রাজ্যের মধ্যে পড়েছে। তাঁর পিতা অশোক চোপড়ার আদিনিবাস পাঞ্জাব রাজ্যের আম্বালায়। তাঁর মাতার নাম মধু চোপড়া এবং নানীর নাম মধু জোৎস্না আখৌরি, যিনি বিহার সংসদের সদস্য ছিলেন। প্রিয়াংকার নানা ড. মনোহর কিষান আখৌরি ছিলেন কংগ্রেসের একজন জনপ্রিয় প্রাক্তন নেতা। প্রিয়াংকার একজন ভাই রয়েছে, যিনি তাঁর চেয়ে ৭ বছরের ছোট। বলিউডের অভিনেত্রী পারিনীতি চোপড়া, মীরা চোপড়া এবং মান্নারা চোপড়া তাঁর কাজিন সিস্টার অর্থাৎ চাচাতো বোন হয়।
বর্তমানের সুন্দরী ও সাবলীল চেহারা অর্জনের জন্য প্রিয়াংকাকে বহুবার ছুরি-কাঁচির নিচে নিজেকে সমর্পণ করতে হয়েছে। তাঁর সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় প্লাস্টিক সার্জারিটি হলো নাকের। বিশ্বাস না হলে প্রিয়াংকার ক্যারিয়ারের প্রথমদিকের ছবিগুলো গুগল থেকে দেখে নিয়েন। এর মধ্যে রয়েছে ২০০০ সালে তাঁর মাথায় যখন বিশ্বসুন্দরীর মুকুট পরানো হয় তখনকার ছবি এবং সঞ্জয় দত্তের বিপরীতে ‘প্ল্যান’ ছবি।
প্রিয়াংকার রোমান্স জীবন নিয়ে খুব বেশি কিছু জানা যায় নি। সহঅভিনেতাদের সাথে সামান্য প্রেম করে থাকতে পারেন, তবে সেটা ঘোষণা দেবার মতো কিছু নয়। কারিনার সাথে যেমন শহিদ কাপুরের মাখামাখি, রণবীর কাপুরের সাথে ক্যাটরিনা কাইফের লিভ টুগেদার, দীপিকার সাথে রণবীর সিং-এর দহরম মহরম – এর কোনোটিই ঘটে নি প্রিয়াংকার বেলায়। তবে শাহরুখের বিপরীতে ‘ডন’ ছবির শ্যূটিং-এর সময় দু’জনের কেমিস্ট্রি টা নাকি ‘একটু বেশি রকম’ জমে গিয়েছিল। আড়ালে-আবডালে শোনা যায়, প্রিয়াংকার কারণে নাকি শাহরুখের বহুদিনের সংসার ভেস্তে যেতে বসেছিল; তবে যাক, সে যাত্রায় রেহাই পায় গৌরি। বর্তমানে প্রিয়াংকা হলিউডের নিক জোনাসের সাথে এনগেজ্ড আছেন, শীঘ্রই তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, নিক প্রিয়াংকার চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট।




বলিউডের কথা যখন আসলোই, তখন আরো কিছু বলে নেয়া যাক। হলিউডে প্রিয়াংকা তিন-চারটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, এর মধ্যে একটি বিখ্যাত রেসলার রক-এর বিপরীতে। এছাড়া তিনি ‘পিটবুল’-এর ফিচারে ‘এক্সোটিক’ নামের একটি গান গেয়েছেন এবং গানটিতে মডেল হিসেবে উক্ত জগদ্বিখ্যাত র্যাপারের সাথে নেচেছেন এবং অভিনয়ও করেছেন। সত্যি, প্রিয়াংকা চোপড়া এমেজিং!
এবার প্রিয়াংকার বাংলাদেশ সফরের কথা বলা যাক। ইউনিসেফ-এর সাথে প্রিয়াংকা বহুদিন ধরে কাজ করছেন, তিনি সংস্থাটির একজন অ্যাম্বাস্যাডর বা শুভেচ্ছাদূত (মনে রাখতে হবে, প্রিয়াংকা একজন ফিলানথ্রপিস্ট বা মানবসেবী)। কয়েকমাস আগে তিনি বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু কিছু অভদ্র পুরুষ তাঁকে খানিকটা জড়িয়ে ধরে সেলফি তোলে, এতে ঐ মুহূর্তে স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করলেও পরবর্তীতে বিশাল রকম ক্ষেপে যান তিনি। এই ঘটনার পর তিনি তাঁর সফর সংক্ষিপ্ত করেন এবং পুনরায় ক্যাম্প সফরের সময় বিভিন্ন প্রকার ধরা-বাঁধা নিয়ম বেঁধে দেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.