প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের মৃত্যু উপলক্ষে কিছু কথা লেখার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। বুঝতেই পারছেন, তাঁর মৃত্যুতে আমার মনোভাব কেমন। কিছু কিছু লোকের মৃত্যুতে লোকজন যতটা না স্যাড হয়, তার চেয়ে উৎফুল্ল হয় বেশি। এখানে আমি যেটা বলবো, সেটা একপেশে নয়, তবে আওয়ামী লীগের ঘোর বা অন্ধ সমর্থক যাঁরা আছেন, তাঁরা হয়তো মানতে পারবেন না।
জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নাসিম দেশপ্রেমিক ছিলেন, দেশের মানুষের এবং তাঁর নিজ এলাকার (সিরাজগঞ্জের কাজীপাড়া, সদরের একাংশ) লোকজনের মঙ্গল চেয়েছেন – এটা সত্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভবত দেশপ্রেমিক হয়ে থাকতে পারেন নি। লোভ হয়তো তাঁকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছিল, যেটা আমরা (দেশের সাধারণ জনগণ) টের পাই ২০১৪ সালে তিনি যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে এলেন, তখন থেকে। এর আগেও ১৯৯৬-২০০১ সালের টার্মে নাসিম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন ভালো না খারাপ কাজ বেশি করেছেন, সেটা আমার ভালো মনে নেই (আমার বর্তমান বয়স ৩৯)। আমার চেয়ে সিনিয়র যারা তাঁরা হয়তো ভালো বলতে পারবেন।
তবে ২০১৪ সালের টার্মে মন্ত্রীত্বে এসে স্বাস্থ্যখাতের সবকিছু পঁচিয়ে ফেলেছেন তিনি – এমনটা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না। স্বাস্থ্যখাতকে তিনি যারপরনাই দুর্বল বানিয়ে রেখে গেছেন এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজ সারছেন বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মি. মালেক – একেবারে অথর্ব মন্ত্রী যাকে বলে আর কি! আমি বুঝি না, দেশের ভিআইপিরা কিছু একটা হলেই কিছুদিন আগ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে চলে যেতেন; দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কি একটুও মায়া নেই তাঁদের? নিজের দেশের স্বাস্থ্যখাত নষ্ট করে ফেলে রেখে কীভাবে তাঁরা বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যান? নিজের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে কীভাবে তাঁরা নিজ সন্তানদেরকে বিদেশে লেখাপড়া করান? এগুলো বিবেকবান কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না।
স্বাস্থ্যখাতে সরাসরি লুটপাট ছাড়াও ভবিষ্যত প্রজন্মকে পঙ্গু বানানোর ‘মহৎ’ কাজ নাসিম আর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ ভালোই করে গেছেন। প্রশ্ন ফাঁস করে করে দেশটাকে একেবারে মেধাশূন্য বানানোর পাঁয়তারা করেছেন তাঁরা। দেশবাসী ভুলে যায় নি, ২০১৪ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ১০০% প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল এবং সে ব্যাচে (‘১৪-‘১৫) অযোগ্যরা সরকারী মেডিকেলসমূহে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল, যোগ্যরা সেটা দেখে দেখে কেবল আঙ্গুল চুষেছে; এটা ছাড়া আর কীই বা করার ছিল তাদের? প্রশ্নফাঁসের টাকার ভাগ কি নাসিম এবং তাঁর পরিবার পান নি? এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে? তাঁর সন্তানেরা, পরিবার পরিজনেরা আমেরিকা ও অন্যান্য জায়গায় নিজেদের আখের গোছায় নি?
আসলে এদেশের ভিআইপিরা ভেবেছিলেন যে, কোনো কিছু হলেই উড়াল দিয়ে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথে চলে যাবেন। কিন্তু কথায় আছে না, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে! তাই দেশের এই ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সাধারণ জনগণের সাথে এসব ভিআইপিদেরও মরতে হবে করোনায়, এক এক করে। এটাই নিয়তির চরম বাস্তবতা! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, who’s next?
করোনায় সকল ডাক্তারের মৃত্যু শহীদি মৃত্যু নয়
নাসিমের মৃত্যু যেমন মহিমান্বিত মৃত্যু নয়, ঠিক তেমনি করোনায় সকল ডাক্তারের মৃত্যুও শহীদি মৃত্যু নয়। কারণ এ সকল ডাক্তারের মধ্যে অনেকেই তাঁদের জীবদ্দশায় রোগীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন। অনেকে ভালো ব্যবহার করলেও তাঁদের টার্গেট ছিল রোগীদেরকে সরকারী বা কমদামের হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নিজের প্রাইভেট ক্লিনিকে বা বেশিদামের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। সরকারী হাসপাতালে এক শ্রেণির দালালই থাকে, যাঁরা এসব ডাক্তারের হয়ে কাজ করে। অনেক ডাক্তার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী থেকে উপঢৌকন নিয়ে নিম্নমানের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতেন। মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে যেতে পারার সক্ষমতা বা সুযোগ থাকার কারণেই তাঁরা এ অকাজগুলো করতে পেরেছেন।
এখন সেই সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসেই তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেকে মারাও যাচ্ছেন। সুতরাং করোনায় এ সকল অসাধু ডাক্তারদের মৃত্যুকে ‘শহীদি মৃত্যু’ বলবো কোন যুক্তিতে? যে সকল ডাক্তার দুর্নীতি করেন নি এবং রোগীদেরকে সর্বদা আন্তরিকভাবে সেবাদান করেছেন তাঁদের মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। এমনকি, যারা দুর্নীতি তুলনামূলকভাবে কম করেছেন, তাঁদের মৃত্যুকেও শহীদি মৃত্যু বলে চালানো যায়। তবে সকল ডাক্তারের ক্ষেত্রে সেটা নয় সঙ্গত কারণেই। অনুরূপ কারণে করোনায় সকল পুলিশের মৃত্যুও শহীদি মৃত্যু নয়। আবার, ডাক্তার ও পুলিশ ছাড়াও অনেক পেশাজীবি আছেন যাদেরকে পেশাসূত্রে সরাসরি সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে যারা দুর্নীতি করেছেন বা সার্ভিসে অবহেলা করে মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন, করোনায় তাঁদের মৃত্যুও শহীদি মৃত্যু নয়।
বিষয়টি নিম্নোক্ত ইউটিউব ভিডিওতে আমি ব্যাখ্যা করেছিঃ
https://www.youtube.com/watch?v=0dwy3JyQcVM&t=1360