দু’-তিন আগে তো ভ্যালেনটাইন্স ডে গেলো। যারা দিবসটা উদযাপন করেছেন, তারা বেশিরভাগই দিবসটির তাৎপর্য না বুঝে শুধুুমাত্র বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে ফুর্তি করেই দিনটা কাটিয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। ফলে অচিরেই অনেক নারীর পেটে অবৈধ সন্তান জন্ম নেবে। যদি খুব শীঘ্রই এই প্রেগন্যান্সি সনাক্ত করতে পারেন, তাহলে ক্ষুদ্রাকার ভ্রুণটিকে নষ্ট করতে পারেন, এতে আমি সমস্যা দেখি না। তবে ভ্রুণটা যদি যথেষ্ট বড় হয়ে গিয়ে থাকে, যেমনঃ তিন-চার মাসের, তাহলে দয়া করে এই বাচ্চাটিকে হত্যা করবেন না, তাকে পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখতে দিন। তারও অধিকার রয়েছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার। এই কথাগুলো বলতে বাধ্য হলাম এই কারণে যে, কিছুদিন পরপরই ফেসবুকে অবৈধ ভ্রুণ বা শিশুবাচ্চার লাশের ছবি চোখে পড়ে, তখন কষ্টে বুকটা ফেঁটে যায় আমার।
সামর্থ্য থাকলে পৃথিবীর সকল অসহায় বাচ্চার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতাম আমি। যেহেতু সে সামর্থ্য নেই, তাই শুধুমাত্র এই অনুরোধটুকু করছি, ওদেরকে কেউ হত্যা করবেন না। আপনি না পারলেও পৃথিবীতে কেউ না কেউ ঠিকই আছেন ওদের ভরণপোষণ করার মতোন। অনেক নিঃসন্তান স্বামী-স্ত্রী আছেন যারা বাচ্চা পালক নিতে ইচ্ছুক, বাচ্চা বৈধ না অবৈধ অত হিসাব তারা করবেন না; কারণ যাদের নেই, তারাই বোঝে বাচ্চার সত্যিকার মর্ম। সাময়িক ফুর্তি করতে গিয়ে আপনার পেটে বাচ্চা এসেছে, এই পাপাচার সৃষ্টিকর্তা ক্ষমা করলেও করতে পারেন; তবে বাচ্চা খুন করার পাপ সৃষ্টিকর্তা কোনোদিনই ক্ষমা করবেন না বলে আমার বিশ্বাস।
সুতরাং পেটে তিন-চার মাসের বাচ্চা থাকলে সেটাকে হত্যা না করে বরং কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বাচ্চাটিকে শেষ পর্যন্ত জন্ম দিন, যেমনঃ পেট বেশ বড় হয়ে গেলে কোনো অাত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিন। বাচ্চাটিকে জন্মের পরপরই কোনো আগ্রহী নিঃসন্তান দম্পত্তির হাতে তুলে দিন। মায়ের বুকের দুধ না পেলেও বাঁচবে সে, ল্যাকটোজেন খাইয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে রেখে হয়তো আপনার তাৎক্ষণিক কোনো লাভ নেই; তবে সৃষ্টিকর্তার দোহাই, বাচ্চাটির আত্মা নিজের অজান্তেই আপনার জন্য অনেক দোয়া করবে। আপনিও এটা ভেবে শান্তি পাবেন যে, মানবহত্যার মতো কোনো মহাপাপ আপনি করেন নি। এই বাচ্চাটিকে বাঁচাতে গিয়ে আপনাকে যদি ভোগান্তি সহ্য করতে হয়, কিছুটা অপমান ও গঞ্ছনা সহ্য করতে হয়, তবুও সেটা করুন না; এটাতো আপনারই রক্ত। কেমন স্বার্থপর মা আপনি, একটা বাচ্চাকে মেরে ফেলে পরের বাচ্চাগুলোকে মানুষ করার স্বপ্ন দেখছেন?
মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তার চোখে বৈধ বা অবৈধ বাচ্চা/মানুষ বলে কিছু নেই। জারজ হলেই যে সে সমাজে ঘৃণিত হবে, ব্যাপারটা তা নয়। গ্রীক দেবরাজ জিউসের পুত্র হারকিউলিস ছিলেন তাঁর অবৈধ সন্তান, তা সত্ত্বেও হারকিউলিস হলেন মিথোলজি (Mythology) বা পুরাকথার সর্বশ্রেষ্ঠ অ্যাকশন হিরো। তিনি নিজের বীরত্ব ও ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষা দেন, তাই শেষ পর্যন্ত পিতা জিউস তাঁকে অমরত্ব প্রদান করে মানব থেকে দেবতা বানিয়ে নিজের কাছে স্বর্গে চিরস্থায়ী করে নেন।
বর্তমানে তথা শতশত বছর ধরে যে মানুষটিকে পৃথিবীর বেশিরভাগ লোক শ্রদ্ধা করেন এবং ঈশ্বরপ্রেরিত বলে মনে করেন, সেই যীশুখৃষ্ট যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন একদল দুষ্ট লোক তাকে ‘জারজ’ তকমা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা সবাই জানি, তিনি ছিলেন ঈশ্বরপ্রেরিত অলৌকিক শিশু। এই শিশুটিই বড় হয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। আজকে ওনার নামই পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ প্রতিনিয়ত নেয়।