কুকুরে কামড়ালে বা আঁচড় দিলে যা করবেন

সাধারণত পোষা প্রাণীরা তাদের মনিবকে কামড়ায় না। কিন্তু কখনো কখনো কুকুর বা বিড়াল তাদের যারা আদর করেন, খাওয়ান, কোলে নেন এবং সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হন তাদেরকেও আঁচড় দিতে পারে। এই ছোট খাট আঘাতগুলো অ্যালকোহল বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করলেই ভালো হয়ে যায়। যদি দুর্ঘটনাবশত কুকুর কামড় দেয় এবং ত্বক ছিলে  যায় এবং রক্ত বের হয় তাহলে ইনফেকশন হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

১। প্রথমেই রক্তপাত বন্ধ করতে হবে।

২। কুকুরটিকে ধরার চেষ্টা করুন। কুকুরটি যদি কারো পোষা হয় তাহলে তার ঠিকানা নিয়ে রাখুন এবং তাদেরকেও সতর্ক থাকতে বলুন।

৩। পাঁচ মিনিট যাবৎ ক্ষতটি ধুয়ে নিন। এক্ষেত্রে কলের পানি ব্যবহার করাই ভালো। যদি কলের পানি সহজলভ্য না হয় তাহলে আক্রান্ত স্থানটি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পানি বার বার পরিবর্তন করে দিন। এক্ষেত্রে গ্লাবস পড়ে নেয়া ভালো। এভাবে আক্রান্ত স্থানটি ধুয়ে ফেললে কুকুরের লালা সম্পূর্ণ দূর হবে।

৪। যদি কুকুরের কামড়ের ফলে হালকা কেটে যায় বা আঁচর লাগে তাহলে পরিষ্কার একটি কাপড় দিয়ে সরাসরি চাপ দিলে রক্তপাত বন্ধ হবে। সম্ভব হলে আক্রান্ত স্থানটি হার্টের চেয়ে উপরের দিকে উঠিয়ে রাখুন। এর ফলে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।




৫। জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিন এবং ঐ দিনই ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।

৬। যদি আক্রান্ত ব্যক্তি গত ৮ বছরে টিটেনাসের ইনজেকশন নিয়ে না থাকেন তাহলে দ্রুত টিকা নিতে হবে। যেকোন ধরণের কামড়ের ফলেই টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মধ্যে জলাতঙ্কের ভাইরাস আছে কিনা তা শুধু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। যদিও কিছু লক্ষণ প্রাণীর মধ্যে জলাতঙ্কের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে যেমন-

১। বন্য পশু দৌড়াতে দৌড়াতে আপনার কাছে আসলে।

২। পশুটির মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকলে এবং তার জিভ ঝুলে থাকলে।

৩। পশুটির শ্বাস নিতে সমস্যা হলে।

৪। বন্য পশুটি হঠাৎ করে আপনার উপর ঝাপিয়ে পড়লে।

প্রাথমিক অবস্থায় র‍্যাবিস চিহ্নিত করা যায় না। কিন্তু কিছু প্রাণী অন্যদের তুলনায় জলাতঙ্ক প্রবণ হয়। যদি কোন কুকুর, বাদুর, শেয়াল, ইঁদুর অথবা কাঠ বিড়ালি আপনার সামনে বা কাছাকাছি আসে তাহলে ধীরে ধীরে এদের সামনে থেকে সরে আসাটাই সবচেয়ে ভালো, যাতে প্রানিটি ভয় না পায় বা রেগে না যায়।

কামড়ের তীব্রতা দেখেই ডাক্তার চিকিৎসার ধরণ নির্ধারণ করবেন যেমন- কামড়ের স্থানটি শুধু পরিষ্কার করলেই হবে নাকি টিকা বা ইনজেকশন ও দিতে হবে।

১। হালকা আচরের ক্ষেত্রে টিকা নেয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়। কুকুরের কামড় যদি খুব বেশি মারাত্মক হয় তাহলে অ্যান্টি-র‍্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

২। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসক ক্ষতটি সেলাই করা এড়িয়ে যান যদিনা সেটি চেহারা বা কোন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে হয়ে থাকে।

৩। যদি পোষা প্রাণী কামড় দিয়ে থাকে তাহলে টিকার ৩ টি ডোজ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথম দিন ১ টি টীকা নিলে দ্বিতীয় টিকাটি নিতে হবে ৩ দিন পরে এবং তৃতীয় টিকাটি নিতে হবে ৭ দিন পরে।

৪। যদি পথের কোন ক্ষিপ্র কুকুর কামড় দেয় সেক্ষেত্রে ৫ বা ৭ টি ইনজেকশন নিতে হবে। টিকার তৃতীয় ডোজ নেয়ার ১ সপ্তাহ পরে নিতে হবে এই  ইনজেকশন। ইমিউনিটিকে উন্নত করার জন্য এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমানোর জন্য এই ইনজেকশন দেয়া হয়।



জলাতঙ্ক থেকে মুক্ত থাকার সঠিক উপায় হচ্ছে টিকা নেয়া এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন নেয়া। যেহেতু জলাতঙ্ক ভাইরাসজনিত রোগ তাই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল লোশন ব্যবহার করে কোন উপকার পাওয়া যায়না। ইনফেকশন যেন না বারে সেজন্য অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াও প্রয়োজন। যদি সময় মত চিকিৎসা করা না হয় তাহলে কুকুরের কামড়ের ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া জলাতঙ্ক নিরাময় করা যায়না। তাই উপসর্গের তীব্রতা বুঝা গুরুত্বপূর্ণ এবং চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চিকিৎসককে চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.