ভবনটির বাইরে দু’পাশ কাচ দিয়ে ঘেরা। সামনের দেয়ালজুড়ে দলীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখা। একপাশে দলীয় প্রতীক নৌকা। এর সামান্য ওপরে বড় করে লেখা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।’ চতুর্থ তলার সামনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের নিদর্শন। পঞ্চম তলায় গেলে চোখে পড়বে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিকৃতি। আর ষষ্ঠ তলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের টেরাকোটা।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নবনির্মিত ১০ তলা এই ভবনই আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শনিবার (২৩ জুন) সকাল ১০টায় নবনির্মিত ভবনটি উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই বছর আগে তিনিই এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।
দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পথচলা দীর্ঘ সাত দশকের। ঢাকার গোপীবাগে রোজ গার্ডেনে ছিল এর প্রথম কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ৭০ বছরে এসে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নবনির্মিত ১০ তলা অত্যাধুনিক ভবনে নতুনভাবে যাত্রা শুরু হচ্ছে দলটির।
জানা যায়, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য সুপরিসর কক্ষ রেখেই সাজানো হয়েছে এই নতুন কার্যালয়। নবম তলায় দলের সভাপতির কক্ষের সঙ্গে রয়েছে বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা। এছাড়া অন্যান্য ফ্লোরে থাকছে ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ ও ক্যাফেটেরিয়া। বিভিন্ন তলায় থাকবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যালয়।
বৃহস্পতিবার (২১ জুন) সরেজমিন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, দোতলা ও তৃতীয় তলায় দুটি বড় আধুনিক সম্মেলন কক্ষ রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে বসতে পারবেন পাঁচশ’র বেশি মানুষ।
শুক্রবার (২২ জুন) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার ভাষ্য, ‘২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১০ তলা নতুন ভবনটি আগামীকাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের তহবিলের টাকা দিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন জায়গায় কার্যালয় থাকলেও এবার একই ভবনে দলের সব নেতাকর্মী একত্রিত হতে পারবেন। এখানে কোথায় কোন কক্ষ থাকবে তা নিজে নকশা করেছেন শেখ হাসিনা।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ৯টায়। শনিবার ভোরে ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন উদ্বোধন করবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর ভবনের অভ্যন্তরে সভাপতিমণ্ডলীসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের জায়গা নির্ধারণ করে দেবেন তিনি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আকর্ষণ দলের এই নতুন কার্যালয়। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসবেন কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা নেতাসহ ৪ হাজার ১৫৭ জন। তাদের অংশগ্রহণে শনিবার রয়েছে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে এই বিশেষ সভা। এতে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সারাদেশ থেকে আসা নেতাদের নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা। নেতাদের মানুষের দুয়ারে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের কথা প্রচারেরও নির্দেশ দেবেন তিনি।
কিছুদিন পর অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের আরেকটি বর্ধিত সভা। এতে অংশ নেবেন সারাদেশের ১৩ থেকে ১৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যান। ওই সভায় আগামী সংসদ নির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা।