সম্প্রতি শান্তিনগরে একটি লিফট দুর্ঘটনা হয়েছে এবং সেখানে ৯ বছরের একটি ফুটফুটে মেয়েশিশু মারা গেছে, এটা হয়তো পত্রিকা বা অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে অনেকেই জেনেছেন। এ বিষয়ে এই ব্লগে একটি ইংরেজি আর্টিক্যালও প্রকাশ করেছি আমি। তবে এরপরেও বাংলায় কিছু লেখার তাগিদ থেকে সরে আসতে পারলাম না। মূলতঃ দু’টি কারণে – আমি নিজেও একটি শিশুর পিতা এবং ঐ মেয়েটি বলতে গেলে একভাবে আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হয়।
আসলে মেয়েটির দাদা হলেন মি. মোহাম্মদ আলী যিনি আমার পিতার বাল্যবেলার বন্ধু এবং তাঁরা দুজনেই একটা সময় একই পেশায় ছিলেন। আমার পিতা বেশি মাথা খাটাতে পারেন নি, তাই ত্রিশ বছর আগে যে পেশায় ছিলেন, এখনো সেই একই পেশায় রয়ে গেছেন।
তবে মোহাম্মদ আলী আঙ্কেল অনেক মেধাবী একজন লোক, সবচেয়ে বড় কথা – তিনি সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে জানতেন, তাই তিনি জীবনে শাইন করেছেন এবং শেষপর্যন্ত ‘আলীবাবা ডোরস’-এর মালিক হয়েছেন। আলীবাবা ডোরস ছাড়াও তাঁর আরো অনেক স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। যাই হোক, তাঁর বা তাঁর পরিবারের সাথে বহুদিন ধরে দেখা হয় না আমার, দেখা হওয়ার সর্বশেষ সুযোগ হয়েছিল গত বছর, যখন আঙ্কেল তাঁর দ্বিতীয় ছেলে ‘সজীব’-এর বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করলেন রেডিসনের অপোজিটে পামভিউ রেস্টুরেন্টে। তবে কোনো একটি অনিবার্য কারণে সেখানে আমি যাই নি।
এবার দুর্ঘটনার কথায় ফিরে আসি। আলভিরা লিফট থেকে নামতে গিয়ে লিফটের দু’দরজার মাঝে আটকে যায়, এসময় সেন্সর কাজ করছিল না। তাই তাকে নিয়ে লিফটটি উপরে উঠতে থাকে এবং তার মাথা ছাদে ‘বারি’ খায়। এতে প্রচুর রক্তপাত হয়, তবে মাথায় বা মস্তিষ্কে আঘাতের কারণেই সে প্রথমত অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে মারা যায় বলে অনুমিত। দুর্ঘটনার সময় অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের অফিসে ফোন করা হলেও সেখান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।
প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর লিফটের দরজার সেন্সর আপনাআপনি কাজ করে, তখন সেটি আলভিরার দেহটাকে ছেড়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ গাড়িতে করে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ আলভিরাকে মৃত ঘোষণা করেন। একবিংশ শতাব্দীর এই পর্যায়ে এসে লিফটের মতো লো টেক ডিভাইসে কারো মৃত্যু ঘটবে – এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। উল্লেখযোগ্য, দু’-এক বছর আগে আমি যে পাবলিকেশন্সে কাজ করতাম, সেখানকার চেয়ারম্যানও তাঁর ধানমণ্ডির বাড়িতে লিফটে আটকে পড়ে আহত হয়েছিলেন।
পরিশেষে বলতে চাই, দেশের প্রতিটি হাইরাইজ দালানের লিফট নিয়মিত যাতে সার্ভিসিং করানো হয় এবং সবসময় যেন লিফটম্যান কর্তব্যরত থাকে। আলভিরার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।